প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের সমর্থন ও বিশ্বাস আমি অর্জন করতে পেরেছি, এটাই আমার মূল শক্তি। আমাদের দেশের জনগণ বুঝতে পেরেছেন যে আমি যদি থাকি, তাদের উন্নয়ন নিশ্চিত হবেই।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুবাই এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজিত ‘রিডিফাইনিং দ্য ফিউচার অব উইমেন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

টানা ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে আসা শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একটা বিষয় অনুধাবন করতে হবে, নারী কেবল নারী নয়। নারীরা হলেন মা। তাই মায়ের মমতায় যদি আপনি রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, অবশ্যই জনগণ আপনাকে সমর্থন দেবে।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বও যে নারীরা পালন করছেন, সে কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটাকে আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করব? আমাদের পুরুষরা খুব দুর্বল? না তা নয়। তারা খুব কো-অপারেটিভ। আমি অবশ্যই বিষয়টির প্রশংসা করি।

বাংলাদেশের সমাজ একসময় ‘খুব বেশি রক্ষণশীল’ ছিল জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি সংবিধান দেন। সেই সংবিধানে বলা হয়েছে, নারী ও পুরুষ সমান অধিকার ভোগ করবে।

নারী নেতৃত্বের বিকাশে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত রাখার বিষয়টিও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।

বাংলাদেশে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে গণতন্ত্র পাওয়ার কথা তুলে ধরার পাশপাশি স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে দেশ গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বক্তৃতায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর সামরিক শাসকেরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে ‘নারীরা কোনো সুযোগ পায়নি’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে ‘নারীদের উন্নয়নে কাজ শুরু করে’। আমি যখন সরকার গঠন করি, তখন দেখলাম কোথাও নারীর কোনো জায়গা ছিল না। তারা ছিল পুরোপুরি অবহেলিত।

নারীদের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার কথা প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন।

ছাত্রজীবন থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেশটাকে জানতাম, সমস্যাগুলো কী সেটা জানতাম। আমি আমার বাবার থেকে শিখেছি। আমার বাবা আমার মেন্টর। আমি শিখেছি আমার জনগণ ও দেশকে কীভাবে ভালোবাসতে হয় এবং দরিদ্র মানুষের জন্য কীভাবে কাজ করতে হয়।

সামরিক শাসকরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছে, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন এই পৃথিবীর যেখানেই সামরিক শাসকেরা শাসন করেন… তারা খুবই রক্ষণশীল। কিন্তু আমি নারীদের জন্য সব কিছু উন্মুক্ত করে দিই।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এভাবেই আমি জনগণের সমর্থন অর্জন করেছি। এটাই আমার মূল শক্তি। জনগণের সমর্থন, জনগণের বিশ্বাস… জনগণ অনুভব করে যে আমি যদি এখানে থাকি (রাষ্ট্র ক্ষমতায়), অবশ্যই তারা লাভবান হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন সপরিবারে নিহত হলেন, তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। সেসব দিনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, দেশে ফেরার পর তার চলার পথও মসৃণ ছিল না। সব খুনি, যুদ্ধাপরাধী, তারা সেই সময় ক্ষমতায় ছিল।… কিন্তু আমি সেগুলো পরোয়া করিনি। আমি ভেবেছি আমাকে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন নারী হিসেবে অবশ্যই সমস্যা রয়েছে, কিন্তু আমাদের পুরুষ সহকর্মীরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন বলে আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। এটা আমার শক্তি।

নারী দিবসের এ আয়োজনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা আনোয়ার বিন মোহাম্মদ গারগাশ, দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমি, জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ডের (ইউএনএফপিএ) নির্বাহী পরিচালক নাতালিয়া কানেম, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো- আইওয়েলা, কার্টটিয়ার ইন্টারন্যাশনাল-এর প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাইল ভিগনেরন।

আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা, অটিজম ও স্নায়ু-বিকাশজনিত সমস্যা বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আলোচনা শেষে দুবাই এক্সপো ২০২০-এর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ও আরব আমিরাত প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।

দুবাইয়ের স্থানীয় সময় দুপুরে দেশটির উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন রশিদ আল মাখতুমের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও অংশ নেয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।

ছয় দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রোববার (৬ মার্চ) আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। দেশটির স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর ও আমিরাতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।

বুধবার (৯ মার্চ) আবুধাবিতে দেশটির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান এবং দেশটির মাদার অফ দ্য ন্যাশন শেখ ফাতিমা বিন মুবারকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। রাতে আবুধাবিতে বাংলাদেশের দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফরের আমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের আঞ্চলিক সম্মেলনের উদ্বোধনী আয়োজনে ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন বাংলাদেশ ও আমিরাতের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের আয়োজনে ব্যবসায়িক ফোরামে ভিডিও কনফারেন্সেও তার যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

শুক্রবার (১১ মার্চ) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় আমিরাতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংবর্ধনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন শেখ হাসিনা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাস আল খাইমায় বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনের ভিত্তি স্থাপন করবেন তিনি।

শনিবার (১২ মার্চ) রাতে প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।